২০শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস। এই দিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি বাংলার গর্ব, বিদ্বজ্জন, দেশভক্ত এবং বাঙালি হিন্দু সমাজের রক্ষাকর্তা ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে। তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছাড়া আজকের পশ্চিমবঙ্গের অস্তিত্ব কল্পনাও করা যেত না।
ডঃ মুখার্জী শুধুমাত্র একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিবিদ এবং সমাজসংস্কারক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে এনেছিলেন যুগান্তকারী পরিবর্তন। তাঁর নেতৃত্বেই কৃষিশিক্ষার জন্য পৃথক কোর্স চালু হয়, সোশ্যাল সায়েন্স বিভাগ গঠিত হয়, আধুনিক পাঠাগার ও সংগ্রহশালা (মিউজিয়াম) প্রতিষ্ঠিত হয় এবং বাংলাভাষায় বৈজ্ঞানিক পরিভাষা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৯৩৭ সালে তাঁরই আহ্বানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ভাষণ দেন। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত পশ্চিমবঙ্গের মান ও মর্যাদাকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। এমন একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাবিদের নেতৃত্ব ছাড়া বাঙালি হিন্দু সমাজ আজ হয়তো আশ্রয়হীন অবস্থায় থাকত।
দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় তাঁর অবদান অতুলনীয়। তিনি ভারতের একতা ও সংহতির জন্য আত্মবিসর্জন দিয়েছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতা এবং ত্যাগের ফলে পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ শুধু একটি ভৌগোলিক সীমানা নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ইতিহাস ও আত্মপরিচয়ের প্রতীক।
আজকের দিনে, যখন আমরা পশ্চিমবঙ্গ দিবস উদযাপন করি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর অবদানের কথা। তিনি না থাকলে এই রাজ্যের জন্মই হতো না। বাংলার হিন্দু সমাজ হয়তো আজ ছিন্নমূল হয়ে দুনিয়ার অন্য প্রান্তে উদ্বাস্তু হয়ে ঘুরে বেড়াত।
আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে এই মহান পুরুষকে স্মরণ করি, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন বাংলার মাটি, জাতি ও সংস্কৃতির রক্ষার্থে।
ইতিহাসের প্রকৃত রক্ষকদের স্মরণ ও মূল্যায়ন জরুরি।
সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব অপরিহার্য।
নিজের সংস্কৃতি ও জাতিগত পরিচয় রক্ষার জন্য ঐক্য ও সচেতনতা প্রয়োজন।
শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের কথা নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।
সামাজিকভাবে এই দিবসের প্রচার ও চর্চা বাড়াতে হবে।
বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে।