অনলাইন শপিং আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বাড়িতে বসে কয়েকটি ক্লিকে পছন্দের জিনিস কেনার সুবিধা সবাইকে আকর্ষণ করে। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে ঠকবাজির ফাঁদ। আজ আমরা এমন একটি সত্য ঘটনার কথা বলব, যেখানে একজন ৭০ বছর বয়সী মহিলা অনলাইন শপিং করতে গিয়ে ৮.৩ লাখ টাকা হারিয়েছেন। এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি এবং কীভাবে এই ধরনের ঠকবাজি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি, তা জানতে এই নিবন্ধটি পড়ুন।
মুম্বাইয়ের মিরা রোডে বসবাসকারী এক ৭০ বছর বয়সী মহিলা অনলাইন শপিং সাইট থেকে ছয়টি তোয়ালে কিনতে চেয়েছিলেন। তিনি মাত্র ১,১৬৯ টাকার অর্ডার দিয়েছিলেন। কিন্তু পেমেন্ট করার সময় তার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯,০০৫ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত টাকা কাটার বিষয়টি তিনি লক্ষ্য করেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্কের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, তিনি যে নম্বরে ফোন করেছিলেন, তা আসলে ব্যাঙ্কের নয়, বরং প্রতারকদের ছিল।
কিছুক্ষণ পরে, তিনি একটি অজানা নম্বর থেকে ফোন পান। ফোনের ওপারে থাকা ব্যক্তি নিজেকে ব্যাঙ্কের কর্মী বলে পরিচয় দেয় এবং তার সমস্যার সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতারকটি তাকে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলে, যার মাধ্যমে তার ফোনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতারকদের হাতে চলে যায়। এরপর তারা তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, ওটিপি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নেয়। ফলস্বরূপ, তার অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৮.৩ লাখ টাকা চুরি হয়ে যায়।
এই ঘটনাটি আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। প্রথমত, অনলাইন শপিং করার সময় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। অনেক সময় প্রতারকরা জাল ওয়েবসাইট তৈরি করে, যা দেখতে হুবহু আসল সাইটের মতো। এই ক্ষেত্রে মহিলাটি যে ওয়েবসাইট থেকে তোয়ালে কিনতে চেয়েছিলেন, তা সম্ভবত জাল ছিল। দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের হেল্পলাইন নম্বর খুঁজতে গিয়ে আমরা প্রায়ই গুগল সার্চের উপর নির্ভর করি। কিন্তু প্রতারকরা জাল নম্বর গুগলের শীর্ষে নিয়ে আসতে পারে। তাই, সবসময় ব্যাঙ্কের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে নম্বর সংগ্রহ করা উচিত। তৃতীয়ত, কোনো অজানা অ্যাপ ডাউনলোড করা বা অজানা লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ এগুলো আপনার ফোনের নিয়ন্ত্রণ প্রতারকদের হাতে তুলে দিতে পারে।
অনলাইন শপিংয়ে ঠকবাজি এড়াতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া যায়:
এই ধরনের ঘটনার কথা অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি বা ডিজিটাল লেনদেনে কম অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের এই বিষয়ে সচেতন করতে হবে। আপনি আপনার পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে এই ঘটনার কথা বলতে পারেন এবং তাদের উপরের পরামর্শগুলো মেনে চলতে উৎসাহিত করতে পারেন। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের নিবন্ধ শেয়ার করে আরও বেশি মানুষের কাছে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এই DHরনের ঠকবাজির শিকার হন, তাহলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। ভারত সরকারের ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল (www.cybercrime.gov.in) বা হেল্পলাইন নম্বর ১৯৩০-এ অভিযোগ জানান। অভিযোগ জানানোর সময় লেনদেনের বিবরণ, স্ক্রিনশট, ইমেল বা চ্যাটের প্রমাণ সংযুক্ত করুন। দ্রুত অভিযোগ জানালে টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
এই ঘটনাটি শুধু আর্থিক ক্ষতির কৌতুক নয়, বরং এটি মানুষের উপর মানসিক প্রভাবও ফেলে। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তিরা এই ঘটনায় বেশি বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারেন। তাই, এই ধরনের ঘটনার পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলা এবং প্রয়োজনে আইনি সাহায্য নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার এবং ব্যাঙ্কগুলোও এই সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে। ভারত সরকারের সাইবার ক্রাইম পোর্টাল এবং টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (TRAI) বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত সচেতনতাই এই সমস্যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
অনলাইন শপিংয়ে ঠকবাজি এবং সাইবার ক্রাইমের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপডেট থাকতে আমাদের ওয়েবসাইট ghostory.in নিয়মিত ভিজিট করুন। এই ধরনের তথ্যমূলক নিবন্ধ আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে নিরাপদ রাখতে সাহায্য করবে। আপনার মতামত এবং অভিজ্ঞতা আমাদের সঙ্গে কমেন্টে শেয়ার করুন। একসঙ্গে আমরা সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি।