ঘরের মেঝেতে ছোট্ট একটি গোল গর্ত। সেখানেই সাড়ে তিন বছরের শিশুটি দাঁড়িয়ে থাকে—মাথা ও হাত বাইরে, শরীর ভিতরে। এই গর্তটিই যেন তার দাঁড়ানোর ভরসা। শিশুটির নাম গোপাল সাওতাল। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। স্বাভাবিকভাবে বসা বা দাঁড়ানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই মা সনচড়ি সাওতাল এই অভিনব পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন, যাতে ছেলেটিকে দাঁড় করিয়ে খাওয়ানো ও পরিচর্যা করতে পারেন।
সনচড়ি ও অনিল সাওতালের একমাত্র সন্তান গোপাল। তারা কুলাউড়ার মুরইছড়া চা বাগানে বসবাস করেন। বাবা অনিল একজন চা-শ্রমিক। প্রতিদিনের রুটিরুজির সংগ্রামে সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় মেটানো তাঁদের পক্ষে অসম্ভব।
একদিন দুপুরে মুরইছড়ার টিলা এলাকায় গেলে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। জিজ্ঞেস করলে সনচড়ি জানান, একবার তাঁরা ছেলেকে সিলেটের খাদিমনগরের একটি প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, গোপালের উন্নতির একমাত্র উপায় নিয়মিত ফিজিওথেরাপি। কিন্তু সেই ব্যয় বহন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সনচড়ির কথায়, “ছেলেটির কান্না আর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারি না। তাই বুদ্ধি করে এই গর্তটি করেছি। সেখানে দিলে ছেলেটি কিছুটা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। যদি সামর্থ্য থাকত, যন্ত্রপাতি কিনে আনতাম। শুনেছি, এই ধরনের শিশুদের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি তৈরি হয়।”
মা সারাক্ষণ সন্তানের পাশেই থাকেন, অন্যদিকে বাবা চা-বাগানে কাজ করে সামান্য যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালান। চিকিৎসার মতো খরচ করা তাঁদের পক্ষে এক প্রকার অসম্ভব।
তাঁদের প্রশ্ন—এই শিশুটি কি সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে? কারো কাছেই তাঁদের জানা নেই। গোপালের বাবা-মায়ের একমাত্র চাওয়া—ছেলেটি একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াক, নিজের মতো করে হাঁটুক।
এমন একটি পরিস্থিতিতে আমাদের সবার উচিত—একটু সহানুভূতির হাত বাড়ানো। একটি পরিবার, একটি শিশুর জীবন পরিবর্তিত হতে পারে আমাদের সামান্য সাহায্যে। আজ যদি কেউ সত্যিই কষ্টে থাকে, আর আপনি সাহায্য করতে পারেন, তাহলে সেটা আপনারই আত্মিক উন্নতি।
প্রতিবন্ধীদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত।
অভাবের মধ্যেও একজন মা কীভাবে সন্তানের জন্য লড়াই করে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখায়।
রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ও সমাজের সমর্থন ছাড়া এইসব পরিবারগুলোর সামনে পথ নেই।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো।
প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য স্থানীয়ভাবে থেরাপি সেন্টার স্থাপন।
প্রতিটি চা-বাগানে স্বাস্থ্য সহায়তা সেল চালু করা।
প্রতিবন্ধী ভাতা সহজলভ্য ও অটোমেটিক সিস্টেম চালু করা।
গোপালের মতো শিশুদের জন্য সরকারিভাবে তৈরি যন্ত্রপাতি ও ফিজিওথেরাপি ইউনিট পৌঁছে দিতে হবে।
সমাজের বিত্তবানদের এ ধরনের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও মিডিয়ার মাধ্যমে আরও প্রচার বাড়ানো দরকার।