ভারতের একজন ডাক্তার, যিনি একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করতেন, তিনি সেই চাকরি ছেড়ে কানাডায় চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে সেলসম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন।
চাকরির প্রথম দিনেই স্টোরের মালিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, “তোমার কি কোনো অভিজ্ঞতা আছে?”
ডাক্তার সাহেব বলেন, “আমি ভারতে একজন ডাক্তার হিসেবে কাজ করতাম।”
প্রথম দিনের শেষে, সন্ধ্যা ছয়টায় মালিক আবার জানতে চাইলেন—“আজ তুমি ক’জন ক্রেতার কাছে পণ্য বিক্রি করেছ?”
ডাক্তার সাহেব উত্তর দিলেন, “আমি একজন ক্রেতার কাছেই বিক্রি করেছি।”
এই কথা শুনে মালিক বেশ হতাশ হয়ে পড়লেন। তিনি জানালেন, “এখানে সাধারণত একজন সেলসম্যান দিনে ২০-৩০ জনের কাছে পণ্য বিক্রি করে। তুমি কেবল একজনকে বিক্রি করেছো? কত ডলারের পণ্য বিক্রি হয়েছে?”
ডাক্তার সাহেব ঠান্ডা গলায় বললেন, “৯৮ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৩ ডলারের পণ্য।”
মালিক হতবাক হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, “এটা কিভাবে সম্ভব?”
ডাক্তার বললেন, “ওই ভদ্রলোক প্রথমে মাথাব্যথার ওষুধ কিনতে এসেছিলেন। আমি তাকে বললাম—মাছ ধরলে মাথাব্যথা অনেকটাই কমে যায়। তিনি রাজি হলেন, আমি তাকে একটি ছোট বড়শি দিলাম। তারপর বুঝিয়ে দিলাম, আরও ভালো ফল পেতে একটি বড় ও মাঝারি বড়শিও দরকার। তারপর তাকে একটি ভালো ফিসিং রড ও গিয়ার বিক্রি করলাম।”
“আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম—কোথায় মাছ ধরবেন? তিনি বললেন—সমুদ্রের ধারে। তখন আমি বললাম, তাহলে তো নৌকার দরকার। আমি তাকে নিচতলায় নৌকার বিভাগে নিয়ে গেলাম, তিনি ২০ ফুটের একটি ডাবল ইঞ্জিনের নৌকা কিনলেন।”
“এরপর আমি বললাম, এই নৌকা তার গাড়িতে ধরবে না। তখন আমি তাকে গাড়ির বিভাগে নিয়ে গেলাম, যেখানে তিনি একটি SUV বুক করলেন। এরপর আমি বললাম, মাছ ধরতে গিয়ে রাতে থাকতে হলে ক্যাম্পিং গিয়ার লাগবে। তিনি একটি ছ’জনের তাঁবু কিনলেন।”
“সবশেষে আমি তাকে বললাম, মাছ ধরতে গেলে খাবার-দাবার নিতে হয়। তিনি ২০০ ডলারের মুদি সামগ্রী ও দু’কেস বিয়ার কিনলেন।”
এই গল্প শুনে স্টোরের মালিক বললেন, “একজন লোক যিনি কেবল মাথাব্যথার ওষুধ কিনতে এসেছিলেন, তাকে দিয়ে তুমি প্রায় এক কোটি টাকার জিনিস কিনিয়ে ফেললে!”
ডাক্তার বললেন, “আমি এর আগে ভারতে ডাক্তার হিসেবে কাজ করতাম। আমি জানতাম কীভাবে মানুষের সমস্যাকে বাড়িয়ে দেখিয়ে তাদের প্রয়োজন তৈরি করতে হয়। প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের নানা অপ্রয়োজনীয় টেস্ট যেমন ইসিজি, এক্সরে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি করিয়ে নিতাম—প্রয়োজন থাক বা না থাক।”
মালিক এবার মজা করে বললেন, “তুমি এখন থেকে আমার চেয়ারেই বসবে, আর আমি তোমার দেশে গিয়ে এই কৌশলের ট্রেনিং নেব!”
সঠিক উপস্থাপন এবং কৌশলে বিক্রয় বাড়ানো যায়।
সেলস মানে হলো সমস্যা চিনে সমাধান বিক্রি করা।
ব্যবসার সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক গভীর।
একজন ডাক্তার বা যেকোনো পেশার মানুষ যদি কমিউনিকেশন ভালোভাবে শিখে, তাহলে তিনি যেকোনো ফিল্ডে সফল হতে পারেন।
এই গল্প শুধু বিক্রয়ের নয়, মানুষের মন বুঝে কাজ করার একটি উদাহরণ।
অপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করা অনৈতিক।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এই প্রবণতা বিপজ্জনক—ভুলভাবে টেস্ট বা ওষুধ দেওয়া বন্ধ হওয়া উচিত।
গ্রাহক বা রোগীদের সচেতন হতে হবে। সব সিদ্ধান্তে প্রশ্ন করা উচিত।
স্বচ্ছতা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পরামর্শ দেওয়া উচিত।
সরকারি পর্যায়ে নিয়ম-কানুন আরও কঠোর করতে হবে।
নতুন উদ্যোক্তা ও সেলসম্যানরা বুঝতে পারবেন, কীভাবে কাস্টমারের প্রয়োজন তৈরি করতে হয়।
এটি দেখায়, কমিউনিকেশন স্কিল কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবেন, কিভাবে তাদের সঙ্গে অতিরিক্ত বিক্রির কৌশল করা হয়, যাতে তারা সচেতন থাকেন।